Sunday, August 30, 2015

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার শেষ সময়ের প্রস্তুতি

দেশের বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্বপ্নের ক্যাম্পাসের নাম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বুয়েটে ঠিকানা করে নিতে হলে তুমুল প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়। বুয়েটের আসন সংখ্যা মাত্র ১০০০ টি। এই আসনের বিপরীতে এবার বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা করবে ৮৮৭৫ জন প্রার্থী। ২২ নভেম্বর বসছে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার আসর। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা থেকে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার ধরনটা একেবারেই আলাদা। অনেকেরই ধারণা, বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা মানেই কঠিন সব প্রশ্ন। ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও সে রকম নয়। ভর্তি পরীক্ষায় অধিকাংশ প্রশ্নই আসে মূল বই থেকে। তবে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে থাকে অনেক সময়। মেধাবীদের এতে অবশ্য চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। যারা ভালো করে মূল বই পড়ে, তাদের সুযোগ বেড়ে যায়। কিন্তু যারা মূল বইয়ের খুঁটিনাটি না জেনে বাধাধরা মুখস্থবিদ্যার ওপর ভরসা রাখে, তাদের জন্য বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা বেজায় কঠিন। কেননা বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীর মৌলিক জ্ঞান যাচাই করা হয়। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত- এই তিনটি বিষয়ের ওপর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করা হয়। এই তিনটি বিষয়েই ২০০ নম্বর করে মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। গণিত : মূল বই থেকে হুবহুও প্রশ্ন হয় গণিতের ক্ষেত্রে অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। ক্যালকুলাস, দ্বিপদী ধারার যোগফল, সম্ভাব্যতা প্রভৃতি অধ্যায় থেকে প্রশ্ন থাকে। গণিতের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, মূল বইয়ের প্রশ্ন হুবহু তুলে দেওয়া হয়। আবার অনেক সময় মূল বইয়ের প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে করা হয়। দ্রুত গণিত সমাধানের জন্য ক্যালকুলেটরের সাহায্য নিতে হয়। তাই তোমাদের উচিত এখন সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটরের ব্যবহার ভালোভাবে শিখে নেয়া। না হলে পরীক্ষার হলে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারো। রসায়ন : মনে রাখতে হবে সংকেত মূল বইয়ের সব অধ্যায় ভালো করে অবশ্যই পড়েছ। তারপরও শেষ মুহূর্তে আবার কয়েকবার রিভাইজ দিতে হবে। যাতে করে সংকেতগুলো মনে থাকে। বিভিন্ন রাসায়নিক নাম, বিক্রিয়া, পারস্পরিক রূপান্তর, নামকরণ বা সংকেত থেকেই প্রশ্ন থাকে বেশি। অনেকে রসায়ন দ্বিতীয় পত্রে একটু সমস্যায় পড়ে। এ বিষয়ের অনেক বিক্রিয়া ও সংকেত আছে, যা সহজে মনে থাকতে চায় না। এজন্য রসায়নের বিক্রিয়া ও সংকেতগুলো বারবার পড়তে হবে। পদার্থবিজ্ঞান : সব অধ্যায়ে সমান গুরুত্ব পদার্থবিজ্ঞান প্রথমপত্রে গতিবিদ্যাসহ প্রতিটি অধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ। আর দ্বিতীয়পত্রে চুম্বক, তড়িৎ শক্তি, তাপ, শব্দ, আলো- এসব অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতিবছর রচনামূলক প্রশ্ন থাকে। আর নৈর্ব্যক্তিকের জন্য সব অধ্যায়ের গুরুত্ব সমান। তাই অবশ্যই বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের ওপর বেসিক নলেজ থাকতে হবে। আর পদার্থবিজ্ঞানের প্রতিটি অধ্যায়ের খুঁটিনাটি বিষয় মনোযোগ সহকারে এবং অবশ্যই বুঝে পড়তে হবে। তাহলে সহজেই মনে থাকবে। কোন বই পড়বে তা গুরুত্বপূর্ণ নয় এখনকার প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগাতে হবে। এ সময়টায় মনে একটু ভয় কাজ করতে পারে। মনে হতে পারে, যা পড়েছি সব ভুলে যাচ্ছি। আবার অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে- এ সময় কার বই পড়ব, কোন বই পড়ব। আসলে কোন লেখকের বই পড়বে সেটা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রতিটি বিষয়ে অন্তত দুজন লেখকের বই ভালোভাবে বুঝে পড়লে কাজে দেবে। পদার্থবিজ্ঞান প্রস্তুতির জন্য অন্তত দু’জন লেখকের বইয়ের সব ম্যাথ সলভ করা উচিত। শাজাহান-তপনের বইটা দেখা যেতে পারে। আবু ইসহাক-তোফাজ্জল হোসেন স্যারের বইটাও অনেক ভালো। যেকোনো বিষয়ের বই পড়ার সময় কোনো নতুন তথ্য কিংবা ব্যতিক্রম কিছু পেলে সেটা একটা খাতায় লিখে রাখতে হবে। কারণ পরীক্ষার আগে পুরো বই পড়া সম্ভব হয় না। এ রকম করে রাখলে পরীক্ষার আগের দিন চোখ বুলিয়ে নিলেই অনেক কাজ হবে। পরীক্ষার আর বেশি বাকি নেই। এ সময়টায় বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে পারো। এতে করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা হয়ে যাবে, তবে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় কোনো প্রশ্নই খুব একটা রিপিট করা হয় না। ৩০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় সময় থাকে মাত্র দেড় ঘণ্টা। যারা দ্রুত লিখতে পারে, তাদের জন্য ভালো। তোমাদের উচিত নিয়মিত লেখার অভ্যাস করা। আর ঘড়ি ধরে লিখিত পরীক্ষার অনুশীলনও করা যেতে পারে। মনে রাখবে, অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান আর গণিত বেশি বেশি অনুশীলন করতে হবে। উত্তর না মিললেও নম্বর পরীক্ষার হলে অবশ্যই মাথা ঠা-া রাখতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় সব প্রশ্নের আনসার করা যাবে- ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। অনেক সময় কম আনসার করেও সুযোগ পাওয়ার নজির আছে। একটা প্রশ্ন না পারা গেলে তার জন্য সময় নষ্ট না করে পরবর্তী প্রশ্নের উত্তরে চলে যেতে হবে। উত্তর দেওয়ার সময় অবশ্যই প্রশ্নের নম্বর মিলিয়ে নিতে হবে। কারণ পরীক্ষা ভালো দিলেও নম্বরে মিল না থাকলে সব পরিশ্রমই প- হয়ে যাবে। অঙ্কে একটু বেশি সময় লাগতেই পারে। তাই বলে অর্ধেক করে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। পুরোটা শেষ করেই অন্য প্রশ্নে যাওয়া উচিত। আর লিখিত পরীক্ষায় উত্তর যথাযথভাবে না মিললেও নম্বর পাওয়ার সুযোগ আছে। আর নির্দিষ্ট উত্তর জায়গায়ই লিখতে হয়। কোনো অতিরিক্ত খাতা দেওয়া হয় না। আর সব জিনিসের বেসিক কনসেপ্ট ঠিক রাখতে হবে, তাহলে প্রকৌশলের স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রাখতে পারবে তুমিও! বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা হয় মোট ৬০০ নম্বরের। সময় মোট ৩ ঘণ্টা। এ বছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত- এই তিনটি বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করা হবে। আর যারা স্থাপত্য বিভাগে পড়তে চাও তাদের আরও ৪০০ নম্বরের মুক্তহস্থ অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে।
----------------------------------------------------------Dailyinqilab

No comments:

Post a Comment