ইংরেজি ‘ভি’ আকৃতির মানববিহীন এই যানটির পাখার দৈর্ঘ্য বোয়িং ৭৬৭-এর সমান। এর ওজন ছোট একটি গাড়ির সমান। এই চালকবিহীন বিমানের সাহায্যেই ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছাতে চাইছে ফেসবুক। সৌরশক্তিচালিত এই যানটি আকাশে ওড়ার সময় ইন্টারনেট বিম ছাড়বে। একই সঙ্গে এক হাজারের বেশি ড্রোন আকাশে ছেড়ে একটি নেটওয়ার্ক তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে ফেসবুকের।
ইতিমধ্যে প্রযুক্তি জগতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইন্টারনেটের বাজারে দখল নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। গুগল ইতিমধ্যে বেলুনের মাধ্যমে আকাশ থেকে ইন্টারনেট সেবা, দ্রুতগতির ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে কাজ করছে। আমাজন ডেটা সেন্টার, পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ড্রোন প্রভৃতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। ফেসবুকের মতো বড় প্রতিষ্ঠান পিছিয়ে থাকবে কেন? অন্য প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের মতো নতুন কিছু করে দেখানোর চাপ ছিল ফেসবুকের ওপর। তাই সরাসরি কোনো পণ্য বা সেবার বদলে আরও উচ্চাভিলাষী প্রকল্প গ্রহণ করেছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। ফেসবুক, গুগল, আমাজনের গৃহীত এই ধারণাগুলো মধ্যে যেকোনো একটি সফল হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এড লাজোস্কা বলেন, ‘ফেসবুক, গুগল, আমাজন সম্পূর্ণ নতুন জিনিস নিয়ে কাজ করছে যা মানুষের জীবন পাল্টে দিতে পারে। হিউলেট-প্যাকার্ড (এইচপি) বা আইবিএমের মতো প্রতিষ্ঠানও আছে কিন্তু তারা এত বড় প্রকল্প নিয়ে ভাবছে না।’
সম্প্রতি সান ফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে মার্ক জাকারবার্গ তাঁর প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কথা তুলে ধরেন। ফেসবুক কীভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেসেঞ্জারের কোড খুলে দিচ্ছে সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। মোবাইল কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে তাঁর এই পদক্ষেপ কতখানি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সে বিষয়ে কথা বলেন তিনি। মানুষের মধ্যে ফেসবুকের প্রভাব বাড়াতে ভবিষ্যতে ইন্টারনেট ড্রোন, ভারচুয়াল রিয়েলিটিযুক্ত চশমা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র তৈরি করবে ফেসবুক সে তথ্যও জানান তিনি।
সম্মেলনে ফেসবুকের মোবাইল মেসেজিং অ্যাপ যেভাবে ৫০ টিরও বেশি অ্যাপ সমর্থন করবে সে তথ্য জানান তিনি। জাকারবার্গ ডেভেলপারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এতদিন আমরা কেবল মেসেঞ্জারের সব ফিচার নিজেরাই তৈরি করে মেসেঞ্জারকে উন্নত করতে কাজ করেছি। এখন আমরা এই প্ল্যাটফর্ম উন্মুক্ত করার মাধ্যমে অ্যাপ নির্মাতাদের সৃজনশীলতাকে তুলে আনতে চাই।
ফেসবুকের ড্রোন
আরও পড়ুন:
গত বছরে অ্যাসেন্টা নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণ করেছিল ফেসবুক। ওই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের নিয়ে তৈরি হয়েছে ফেসবুকে ড্রোন টিম। এই টিমটি সৌরশক্তিচালিত ড্রোন তৈরি করবে যা একটানা তিন মাস আকাশ থেকে (৬০ হাজার থেকে ৯০ হাজার ফুট) দ্রুত গতির লেজার বিম নিক্ষেপ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা দিতে পারবে। এ বছরেই এই ড্রোনের পরীক্ষা চালানো হবে। তবে, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই ড্রোন চালু করতে আরও কয়েক বছর লেগে যাবে।
ফেসবুক কানেকটিভিটি ল্যাবের প্রধান ইয়েল ম্যাগুয়ার বলেন ‘আমরা বিশ্বের প্রতিটি মানুষকে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা দিতে চাই। আমরা কী এমন একটি জায়গায় যেতে পারব যেখানে বিশ্বের সব মানুষ একই সময়ে একই বার্তা পাবে? আমি সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি। সেই দিনটি পেতে হয়তো অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে।’
Source:P.Alo

No comments:
Post a Comment